Sunday, August 1, 2010

মাহমুদুর রাহমান-এক অদম্য সাহসী নাম।

মাহমুদুর রাহমান-এক অদম্য সাহসী নাম।

লিখেছেন সত্য কথা ১৮ মার্চ ২০১১, রাত ০৯:৪১



অবশেষে দীর্ঘ ৯মাস ১৬দিন কারাভোগের পর মুক্ত পেলেন মাহমুদুর রহমান।২০১০ সালের ২ জুন ভোররাতে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে কোনো ওয়ারেন্ট ছাড়াই একটি সাজানো মামলায় পত্রিকা অফিস থেকে গ্রেফতার করে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। অন্যায়ভাবে বন্ধ করে দেয়া হয় আমার দেশ পত্রিকা। এরপর মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে দেয়া হয় একের পর এক বানোয়াট মামলা।মামলার সংখ্যা এখন ৪৯এ।চার মামলায় তাঁকে ১২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট। রিমান্ড চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে আবেদন করেন মাহমুদুর রহমান। হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ রিমান্ডে নিয়ে তাঁকে কোনো রকমের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন না করার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেন। কিন্তু উচ্চ আদালতের এই আদেশের তোয়াক্কা করেনি থানা পুলিশ। তাঁকে ক্যান্টনমেন্ট থানায় নিয়ে চোখ বেঁধে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করা হয়।নির্যাতনের ফলে অজ্ঞান হয়ে পড়েন তিনি। পরে আরও একদিন ডিবি অফিস থেকে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় উত্তরায় একটি টর্চার সেলে। সেখানেও তাঁকে শিকল দিয়ে হাত বেঁধে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় দিনভর। শুধু তা-ই নয়, কারাগারে নেয়ার পরও তাঁকে মানসিক নির্যাতন করা হয় নানাভাবে। প্রথমে তাঁকে ডিভিশন দেয়া হয়নি। কারাবিধি অনুযায়ী স্বাভাবিক নিয়মেই তিনি ডিভিশনপ্রাপ্য ছিলেন। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ তাঁকে ডিভিশন দেয়নি। একটি সাধারণ সেলে সাধারণ বন্দিদের সঙ্গে তাঁকে রাখা হয়। কয়েকদিন পর কারা কর্তৃপক্ষের শুভবুদ্ধি দেখা দেয়। তাঁকে ডিভিশন সেলে যাওয়ার অনুরোধ করেন। তিনি এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। থেকে যান সাধারণ বন্দিদের সঙ্গে। এ অবস্থায় গত ১৫ অক্টোবর তাঁকে ঢাকার নাজিমউদ্দীন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে নেয়া হয় গাজীপুরের কাশিমপুরে। সেখান থেকে তাঁকে মামলায় হাজিরার জন্য আনা হয় ঢাকার আদালতে। আসা-যাওয়া করতে রাস্তায় সময় লাগে ৭ ঘণ্টা। এই ৭ ঘণ্টা প্রচণ্ড গরমে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো প্রিজনভ্যানে। এই যায়গায় ও লঙ্ঘন করা হয়েছে কারাবিধি। কারাবিধি অনুযায়ী আসামিকে রাখতে হয় আদালতের নিকটতম কারাগারে। জনবহুল পথ এড়িয়ে আদালতে যাতায়াত করাতে হয় আসামিদের। এক্ষেত্রে আইনের সম্পূর্ণ উল্টো হয়েছে। তাঁকে আদালতের নিকটতম কারাগার থেকে নেয়া হয়েছে বহু দূরে। মামলায় হাজিরার নামে রাজশাহীতে নিয়ে রাখা হয়েছে ফাঁসির আসামির সেলে। ফাঁসির আসামিদের সঙ্গে থাকতে হয়েছে একজন ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দিকে! কক্সবাজারে কারাগারে নেয়ার পথে ১৪ ঘণ্টা কিছুই খেতে দেয়া হয়নি। শারীরিক, মানসিক নির্যাতনের এমন কোনো পন্থা নেই যা তাঁর ক্ষেত্রে প্রয়োগ হয়নি। একে একে তাঁর বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা এখন পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে ৪৯টি। মামলাগুলো হচ্ছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, বানোয়াট। সরকার ভাল করেই জানত এসব মামলায় তাঁকে কারাগারে আটক রাখা সম্ভব হতো না। এজন্য আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘চেম্বার জ়জ় মানেই সরকার পক্ষের স্টে’প্রতিবেদনের কারণে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে মামলা করা হয় তার বিরূদ্ধ।এ মামলায় গত ১৯য়আগস্ট তাঁকে ৬ মাসের কারাদণ্ড ও ১ লাখ টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে ৬মাসের কারাদন্ড দেয়া হয়।। দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ এ দণ্ড দেন। দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিলের কোনো সুযোগ নেই। দেশের প্রচলিত আইনে খুনি, সন্ত্রাসী, ধর্ষণকারী থেকে শুরু করে সবাই প্রথম বিচারের পর চারস্তরে আপিলের সুযোগ পায়। মাহমুদুর রহমানের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম হয়েছে। কোনো ফোরামে আপিল করা যাবে না। আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে কোথায়ও আপিল চলে না। শুধু একটি সুযোগ থাকে রিভিউ পিটিশন দেয়ার। এটির সুযোগও পাওয়া যায়নি। কারণ আদালত রায় দেয়ার পর সাড়ে ছয় মাসে রায়ের কপি দেননি। রায়ের কপি ছাড়া রিভিউ পিটিশন করা যায় না। এখানেও বঞ্চিত করা হয়েছে সাংবিধানিক অধিকার থেকে। দণ্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর্যায়ে এসে গত ৬ মার্চ রায়ের কপিতে স্বাক্ষর করেন বিচারপতিরা, যা মাহমুদুর রহমানের কোনো কাজে আসেনি।
এখানে উল্লেখ্য, ব্রিটিশ আমলে তৈরি করা আমাদের আদালত অবমাননা আইন। এদেশের মানুষকে নির্যাতনের জন্যই ব্রিটিশরা আইনটি তৈরি করেছিল। এ আইনে সর্বোচ্চ দণ্ড হচ্ছে ৬ মাস জেল ও অনধিক ২ হাজার টাকা জরিমানা। কিন্তু আমাদের সুপ্রিমকোর্ট বিদ্যমান আইন অতিক্রম করে ১ লাখ টাকা জরিমানা করেন। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে ‘চেম্বার মানেই সরকার পক্ষে স্টে’ শিরোনামে যে প্রতিবেদনের জন্য শাস্তি দেয়া হয়েছে মাহমুদুর রহমানকে, সেখানে কোনো অসত্য বা ভুল তথ্য ছিল, রায়ে সেটা বলতে পারেননি আদালত। রায়ে বলা হয়েছে, রিপোর্টটির মাধ্যমে জনসমক্ষে আদালতকে হেয় করা হয়েছে। এই রায়ের শাস্তিভোগ গতকাল শেষ হয়েছে। মাহমুদুর রহমান সুপ্রিমকোর্টের জরিমানা না দিয়ে বাড়তি এক মাসসহ আদালত কারাভোগ করেন। কারাগারের রেওয়াজ অনুযায়ী দণ্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার দিন সরকারি নিয়মিত ছুটি থাকলে আগের দিনই মুক্তি দেয়া হয়। এ হিসাবে গতকাল তিনি মুক্তি পান। কারণ বাকি সব ক’টি মামলায় তিনি বিভিন্ন আদালত থেকে আগেই জামিনে রয়েছেন।
মাহমুদুর রহমান লেখালেখি শুরু করেছিলেন ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির (১/১১) জরুরি অবস্থার অগণতান্ত্রিক সরকারের আমলে। জরুরি অবস্থার স্বঘোষিত সরকারের অসাংবিধানিক কার্যক্রম ও দুর্নীতি নিয়ে তখন লেখালেখি করেছেন। তাঁর লেখায় মানুষ উজ্জীবিত হয়েছে তখন। অগণতান্ত্রিক সেনাসমর্থিত স্বঘোষিত সরকারের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি হয়েছে তাঁর লেখায়। ১/১১-এর অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক সরকারের বিরুদ্ধে তার কলাম পড়ার জন্য মানুষ অপেক্ষায় থাকত। ২০০৮ সালে মিডিয়া জগতে সরাসরি যোগ দেন। সঙ্কাটাপন্ন অবস্থায় আমার দেশ-এর মালিকানা ও পরে সম্পাদকের দায়িত্ব নেন তিনি। আমার দেশ-এর দায়িত্ব নেয়ার পর অন্যায়, দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে তাঁর কলম ছিল সোচ্চার। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ববিরোধী চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সবসময় সাহসী কণ্ঠে কথা বলেছেন, লিখেছেন অকপটে। তাঁর ক্ষুরধার লেখনীতে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ববিরোধী চক্রান্তকারীদের বুকে কাঁপন ধরেছিল। আর এ ভীতি থেকেই তাকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়।তার কলমকে থামিয়ে দেয়ার জন্য চক্রান্ত আর ষড়যন্ত্রের জাল বিছিয়ে দেয়া হয়।মামলার পর মামলা করা হয়।করা হয় অকথ্য নির্যাতন।কিন্তু মুক্ত হয়েই মাহমুদুর রহমান ঘোষণা দিয়েছেন কলমের লড়াই চালিয়ে যাওয়ার।মাহমুদুর রহমান বলেন-এই সরকার আমাকে গ্রেফতার করেছিল সত্য কথা বলার অপরাধে।তারা আমার কলম কেড়ে নিতে চেয়েছিল।আপনাদের আমি ভরসা দিচ্ছি এবং আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীকে জানাতে চাচ্ছি ঈনশাআল্লাহ আমার কলম বন্ধ হবেনা।সত্যের পক্ষে কলমের যে লড়াই করার অপরাধে আমি গ্রেফতার হয়েছি,সেই সত্যের পক্ষে কলমের সে লড়াই অব্যাহত থাকবে।আমরাও চাই মাহমুদুর রহমানের এ কলম লড়াই অব্যাহত থাকুক।সমস্ত অপশক্তি,অন্যায়,জুলুম,নির্যাতন এবং দেশদ্রোহী শক্তির বিরুদ্ধ তার কলম এগিয়ে চলুক দুর্বার গতিতে।
শেয়ার করুন 
৭৫ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
রেটিং +৪/-১
রেটিং দিতে লগইন করুন
পাঠকের মন্তব্য:
206543
১৮ মার্চ ২০১১; রাত ১০:০৫
লন্ডন থেকে লিখেছেন : পড়ে খুব ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।
Click this link...
১৯ মার্চ ২০১১; রাত ০৪:২৫
166009

সত্য কথা লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকেও..
206549
১৮ মার্চ ২০১১; রাত ১০:০৮
শিশির ভেজা ভোর লিখেছেন : বিম্পিজামাতের কাছে হিরো কিন্তু দেশবাসী তথা অন্যান্য দলের কাছে জিরো। উনাকে নিয়ে লাফালাফি করার কি আছে বুঝি না। দেশটা উন্নতি হবে কিভাবে? এভাবে যদি একজন চাপাবাজি, মিথ্যাবাদি এবং দেশদ্রোহীকে নিয়ে হৈচৈ করা হয় তাহলে তো দেশটা রসাতলে যাবেই। ধিক্কার জানাই এসব অর্ধশিক্ষিতদের।  
১৮ মার্চ ২০১১; রাত ১০:১৭
165643

সত্য কথা লিখেছেন : কে মাহমুদুর রহমান অর্ধ শিক্ষিত????    
১৮ মার্চ ২০১১; রাত ১০:১৯
165648

বিপ্লবের হাতিয়ার লিখেছেন : ভাই মাহমুদূর রহমানের জুতার জোগ্যতা আছে কিনা আগে দেখেন তারপর মাহমুদুর রহমানের সমালোচনা করেন। উনার মত সৎ এবং সাহসী মানুষের দরকার এ ক্রান্তিকালে।
১৮ মার্চ ২০১১; রাত ১০:২২
165652

বাংলাদেশ ২০২১ লিখেছেন : মাহমুদুর রহমান যদি 'চাপাবাজ,মিথ্যাবাদী এবং দেশ দ্রোহী'(যেমনটি শিশির ভেজা ভোর লিখেছেন) হন তাহলে আবার নতুন করে ঐ 'শব্দ গুলো'র 'পরিভাষা' লিখতে হবে 'ভাষাবিদ'দের।
আর সে কাজটা পূর্ণ শিক্ষিত(?) শিভেভো-র দ্বারাই শুরু হলো ভেবে নেয়া যায়।
206554
১৮ মার্চ ২০১১; রাত ১০:১২
বিপ্লবের হাতিয়ার লিখেছেন : তার মাঝে নতুন বিপ্লবীদের খুজে পাই। আশা করি সামনের বিপ্লবে এ কলম সৈনিক ভূমিকা রাখবেন।
১৯ মার্চ ২০১১; রাত ০৪:২৭
166010

সত্য কথা লিখেছেন : আমরাও তাই আশা করি..ধন্যবাদ আপনাকে।

No comments:

Post a Comment