সালিশকারীদের অপবাদ আর গঞ্জনা সইতে না পেরে খোদ রাজধানীতে এবার এক মেয়ে আত্নহত্যা করেছে।খবরে প্রকাশ,পারভীন নামের এই মেয়েটি একটি গার্মেন্টস এ কাজ করে।তার মা এক মেসে রান্না-বান্নার কাজ করে।সে মেসে এক সেলুন কর্মী নাজমুল হক আসা-যাওয়া করত,সে সুবাধে নাজমুল আর পারভীনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে।
মঙ্গলবার দিন সকালে পারভীন গার্মেন্টস এ যেতে নিলে নাজমুল তাকে মেসে নিয়ে যায়।ব্যপারটা টের পেয়ে স্থানীয় কিছু ছেলে পারভীনকে মারধর করে বাসায় পাঠিয়ে দেয়।
পারভীন ঘটনাটা তার মাকে জানালে তার মা নাজমুলের বাবা আইউব মোল্লার কাছে ঘটনা বলে।এবং সে দিন দুপুরে স্থানীয় এক মাতব্বরের বাসায় ব্যপারটা নিয়ে সালিস বৈঠক বসে।সালিসে বৈঠককারীরা কোন মীমাংসা না করে উল্টো পারভীন ও তার মার চরিত্র নিয়ে নানা কথা বলতে থাকে।গঞ্জনা সইতে না পেরে পারভীন সালিশের পর গলায় ফাসঁ লাগিয়ে আত্নহত্যা করে।
Click this link...সাইক্লপ নামে একটা চরিত্র আছে গ্রীক মিথে।একচোখা একটা দৈত্য।যে একচোখ দিয়ে পৃথীবি দেখে।আজকাল মাঝে মাঝে সমাজটাকে আমার সাইক্লপের মত একচোখা এক দানব মনে হয়।কেন জানি সাইক্লপরুপী এ সমাজটা একটা চোখ দিয়ে সব কিছু বিচার করে।
ব্যভিচার কিংবা হারাম কোন সম্পর্কের ক্ষেত্রে ছেলে এবং পুরুষ উভয় এ সমান দায়ী।দুই পক্ষের সম্মতি ছাড়া এ ধরণের সম্পর্ক তৈরী হয়না।আর এ জন্য এ ধরণের সম্পর্কের শাস্তিও আল্লাহ রাব্বুল নারী-পুরুষ সবার জন্য সমান নির্ধারণ করেছেন।
সুরা নুরে এ ব্যপারে বলা হয়েছে-
ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী উভয়ের প্রত্যেককে এক শত বেত্রাঘাত করো। আর আল্লাহর দ্বীনের ব্যাপারে তাদের প্রতি কোন মমত্ববোধ ও করুণা যেন তোমাদের মধ্যে না জাগে যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান আনো। আর তাদেরকে শাস্তি দেবার সময় মু’মিনদের একটি দল যেন উপস্থিত থাকে।আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেখানে উভয়কে সমান অপরাধী বিবেচনা করে একি ধরণের শাস্তি ঘোষনা করেছেন,সেখানে আমাদের সমাজ সাইক্লপের মত এক চোখ দিয়ে শুধু মেয়েটার ত্রুটিটাই দেখে।পুরুষটা যেন শুধু পরিস্থিতির স্বীকার এই মনে হয় তাদের আচরণে।লাবণ্য থেকে শুরু করে পারভীন সবার বেলা সমাজের একি রায়।ব্যতিক্রম খুব একটা দেখা যায়না।অথচ যদি নিরপেক্ষভাবে দেখা হয় তাহলে বলতে হয় মেয়েটাই পরিস্থিতির স্বীকার।মেয়েদের মাঝে সহযে মানূষকে বিশ্বাস করার একটা প্রবণতা আছে,আর যাকে প্রিয় মনে হয় তাকে চোখ বন্ধ করে সে বিশ্বাস করে।আর এ বিশ্বাসে কারণেই সে বিয়ের প্রতিশ্রুতি বিশ্বাস করে প্রতারিত হয়।অবশ্য আমি এ ধরণের হারাম সম্পর্কের জন্য ২জনকেই সমান দায়ী বলব।
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে-
ব্যভিচারী যেন ব্যভিচারিনী বা মুশরিক নারী ছাড়া কাউকে বিয়ে না করে এবং ব্যভিচারিনীকে যেন ব্যভিচারী বা মুশরিক ছাড়া আর কেউ বিয়ে না করে। আর এটা হারাম করে দেয়া হয়েছে মু’মিনদের জন্য -(নুর:০৩) ।অর্থাৎ এ ধরণের হারাম সম্পর্ক যাদের মাঝে তৈরী হবে তারাই এক জন আর একজনের জন্য সবচেয়ে যোগ্য।কিন্তু আমাদের সমাজের সালিশগুলোর রেজাল্ট হচ্ছে মেয়েদের তিরস্কার আর ছেলেটাকে বাচাঁনোর চেস্টা।
মেয়েটা তার প্রতারিত হওয়ার সমাধান না পেয়ে উল্টো এতগুলো লোকের সামনে সত্য মিথ্যা মিশানো অপবাদ শুনে ফলাফল হিসেবে ঘড়ে ফিরে আত্নহত্যার কোলে ঢলে পড়ে।বেচেঁ থাকার চেয়ে মৃত্যুটাকেই তার আপন মনে হয়।
লাবণ্য... থেকে শুরু করে পারভীন সবাই একি ভাবে মুক্তির পথ খুজেঁ।কিন্তু এ মুক্তির পথ যে ভুল পথ এ বোকা মেয়েগুলো তা বুঝেনা।কিংবা পৃথিবী তাদের কাছে এতো সঙ্কীর্ন হয়ে যায় তার ঠাইঁ হয়না এখানে।
কখনো কখনো ইচ্ছে করে চিৎকার করে বলি-
মেয়ে তোমরা একটু সাহসী হও।একি অপবাদ আর একি কাজ করে যদি রাসেল আর নাজমুল আত্নহত্যা না করে,তাদের সম্মান নস্ট না হয়,তাহলে তোমার সম্মান কেন নস্ট হবে????কেন তুমি আত্নহত্যা করবে??তুমি বেচেঁ থেকে দেখিয়ে দাও তোমার সম্মান কাচেঁর গ্লাসের মত এত ঠুনকো না,সাইক্লপের মত একচোখা সমাজের রায় শুনে কিংবা অপবাদে তোমাকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হবে।আর দেখিয়ে দাও ছেলেদের সম্মান বর্ম দিয়ে সুরক্ষিত না,একের পর এক অপরাধ করে হাসের মত গা ঝাড়া দিয়ে একদম পরিস্কার হয়ে যাবে।মেয়েরা একটু ঘুড়ে দাড়াঁতে শিখ।দয়া করে কেউ আত্নহত্যার মত ভূল পথ বেছে নিওনা।
আর বিচারপতিদের প্রতি আহবান-বিচারের বেলায় আল্লাহকে ভয় করে বিচার করেন।আর পুরুষদের প্রতি বলব-আল্লাহর বিচার এতো সুক্ষ্ণ,আজ় আপনার কারণে একটা মেয়ে যদি প্রতারণার স্বীকার হয়,আপনার প্রিয় কন্যা কিংবা ছোট বোনটা অন্য একটা পুরুষ থেকে একি প্রতারণার স্বীকার হবে।তখন হয়তো আজ়কের প্রতারক পুরুষরা কিছুটা উপলব্ধি করবে-প্রিয় মানুষগুলো কস্ট পেলে কেমন লাগে???
সবশেষে আমার চাওয়া মেয়েরা আর একটু সাহসী হোক,প্রতারক পূরুষগূলোর বিবেক হোক,আর সমাজের আর একটা চোখ জ়ন্মাক।সাইক্লপরুপী এ সমাজকে আর দেখতে চাইনা আমি।
No comments:
Post a Comment